আল্লাহর কিতাব
যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নবি-রাসুলগণের ওপর অনেক কিতাব নাযিল করেছেন। নবি-রাসুলগণ আল্লাহ তা'আলার নিকট থেকে যেসব কিতাব বা গ্রন্থ লাভ করেছেন সেসব ধর্মগ্রন্থই আল্লাহর কিতাব। এগুলোকে আসমানি কিতাবও বলা হয়। মহান আল্লাহ হযরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে তাঁর বাণীসমূহ নবি-রাসুলগণের নিকট প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবি-রাসুলগণ তা সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত নাজিলকৃত সব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অঙ্গ।
কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনার অর্থ ও তাৎপর্য
মানব জাতির জন্য হিদায়াত ও আলোকবর্তিকা হিসেবে সত্য ধর্ম নিয়ে সকল আসমানি কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এগুলো আল্লাহর কালাম বা বাণী। এ বাণীসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে রাসুলগণের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনার অর্থ হলো—যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কিতাবসমূহ অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোকে সত্য বলে মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করা।
আমরা জেনেছি, নবি ও রাসুলদের (আ.) মধ্য থেকে সকল রাসুল (আ.) আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কিতাব পেয়েছেন। কিন্তু কিতাবপ্রাপ্ত সকল রাসুলের নাম এবং তাঁদের কিতাব সম্পর্কে বর্ণনা কুরআন-হাদিসে উল্লেখ নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেন -‘আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি।' (সূরা গাফির, আয়াত: ৭৮)
তাই আল্লাহর কিতাবসমূহের মধ্যে যেগুলোর নাম আমরা জানি, সেগুলোর প্রতি যেমন ইমান আনতে হবে তেমনি নাম না জানা আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতিও ইমান আনতে হবে। এক কথায়, সকল আসমানি কিতাবের ওপর ইমান আনা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয বা অবশ্য কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, হে মু'মিনগণ! তোমরা ইমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসুলের প্রতি, আর সেই কিতাবের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রাসুলের উপর এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যা তিনি নাযিল করেছেন তার পূর্বে। আর যে কুফরি করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি এবং পরকালের প্রতি, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা আন নিসা, আয়াত : ১৩৬)
আমরা শেষ নবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মাত। তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম আল-কুরআন। আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি আমাদের ইমান যথার্থ হওয়ার জন্য আমাদেরকে পূর্বের সকল নবি-রাসুলের উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহকে সত্য বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করতে হবে; আর আল কুরআনকে সত্য বলে মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করে এ কুরআনে বর্ণিত সকল বিধি-বিধান মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আল কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পূর্বের সকল আসমানি কিতাব এবং তার বিধান রহিত হয়েছে। তাই পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমুহতে কেবল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে কিন্তু সেসব কিতাবের বিধি-বিধানসমূহ আমাদের পালন বা বাস্তবায়ন করতে হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য কেবল আল কুরআন অনুসরণ ফরয।
আরও উল্লেখ্য যে, পূর্বের সকল কিতাব সত্য কিন্তু যুগে যুগে এগুলোতে মারাত্মক বিকৃতি ঘটেছে। কিন্তু আল কুরআন যাবতীয় বিকৃতি থেকে মুক্ত ও সুরক্ষিত। কারণ, এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নিজে নিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
অর্থ: ‘আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই এর সংরক্ষক।' (সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯)
কিতাবসমূহের পরিচিতি
আল-কুরআনে কেবল ৪ খানা প্রধান কিতাব এবং ২৫ জন নবি-রাসুলের নাম ও প্রসঙ্গ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া আল কুরআনে হযরত ইবরাহীম ও হযরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি কতিপয় ‘সহিফা’ (পুস্তিকা বা ছোট কিতাব) নাজিলের এবং যুগে যুগে অন্যান্য রাসুলগণের (আ.) উপর আরও অনেক সহিফা নাজিলের কথা উল্লেখ আছে। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই এটি রয়েছে পূর্ববর্তী সহিফাসমূহে; ইব্রাহীম ও মুসার সহিফাসমূহে।' (সূরা আল-আ'লা, আয়াত: ১৮-১৯) কিন্তু এগুলোর নাম ও সংখ্যা আল কুরআনে বর্ণিত হয়নি। একমতে, এ সহিফাসমূহের সংখ্যা মোট ১০০ খানা। সে অনুসারে প্রধান চার কিতাব ও সহীফাসমূহ মিলিয়ে মোট আসমানি কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। প্রধান চারখানা কিতাব হলো—
১. তাওরাত
তাওরাত হযরত মূসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মুসাকে কিতাব (তাওরাত) দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।' (সূরা আল মু'মিনূন, আয়াত: ৪৯)
২. যাবুর
এ মহাগ্রন্থ হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘আর আমি দাউদকে দিয়েছি যাবুর।' (সূরা আল ইসরা, আয়াত: ৫৫)
৩. ইঞ্জিল
এটি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘আমি তাদের পশ্চাতে ঈসা ইবনে মরিয়মকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহ ভীরুদের জন্যে হেদায়েত ও উপদেশ বাণী।' (সূরা আল মায়িদা, আয়াত: ৪৬)
৪. আল কুরআন
আল কুরআন শেষ নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ। আল কুরআনের আরেক নাম ফুরকান। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন, যা তার পূর্বের কিতাবের সমর্থক। আর তিনি অবতীর্ণ করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জিল-ইতোপূর্বে মানবজাতির সৎ পথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন ।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩-8)
আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাস করা ইমানের মৌলিক সাতটি বিষয়ের মধ্যে একটি। আমরা জানা-অজানা সকল আসমানি কিতাবে বিশ্বাস রাখব এবং আল কুরআনের বিধি-বিধান মোতাবেক আমাদের জীবন পরিচালনা করব।
এতক্ষণ যা কিছু জানলে তা যে কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষা তা তুমি কীভাবে বুঝবে? কুরআন এবং হাদিস পাঠ করে, তাই না? তাহলে এখন কুরআন এবং হাদিসের কোথায় কোথায় আকাইদের এই বিষয়গুলোর উল্লেখ রয়েছে তা খুঁজে বের করো। এই কাজে শিক্ষক ও অন্যান্য বন্ধুদের সহায়তা নাও। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য এবং গুরুজনদেরকে জিজ্ঞেস করো। অর্থসহ কুরআন এবং হাদিস পাঠ করেন বা কুরআন-হাদিস এর ব্যাখ্যা খুব ভালোভাবে জানেন এমন কাউকে জিজ্ঞেস করেও তুমি এই কাজটি করতে পারো।
Read more